একরাশ ভালোবাসা মানেই বিরিয়ানি

মশলাদার বিরিয়ানি  শব্দটি শুনলেই মন ,প্রাণ যেন জরিয়ে যাই। ‘বিরিয়ানি ‘ এটি শুধু খাবার শব্দেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি হলো ভালোবাসার আরেক ঐতিহ্য।

 

বিরিয়ানি কি

মশলাদার বিরিয়ানি হলো আবেগ, ভালোবাসা, দুঃখ, কষ্টের এক বিশাল সমাবেশ। বিরিয়ানি মানেই ছোট থেকে বড় সবার অতি শখের একটি খাবার। এটি একটি সুগন্ধিযুক্ত খাবার,যার ঘ্রাণ ছোট থেকে বড় সবার মন ছুঁয়ে যায়।

 

বিরিয়ানি কেন এত ভালোবাসাময় 

মানুষের জীবনে যেমন প্রেম, ভালোবাসা সত্যি। তেমনি মশলাদার বিরিয়ানিও সবার ভালোবাসা ও শখের জিনিস। আচ্ছা বলেন তো কে না ভালোবাসে,এই বিরিয়ানিকে। প্রেম ধোঁকা দেয়, ভালোবাসা হারিয়ে যায়। কিন্তু বিরিয়ানি প্রশ্নই উঠে না। বিরিয়ানি তো বিরিয়ানিই-যার কোনো তুলনা হয় না।

 

বিরিয়ানির উৎপত্তি 

পারস্য থেকে ভারতবর্ষে আগত মুঘলদের হাত ধরেই বিরিয়ানি এই উপমহাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর ধীরে ধীরে এটি বিস্তৃত লাভ করে। মানুষ এটিকে নানাভাবে উপলব্ধি করতে শিখে।আর এইভাবেই যেন বিরিয়ানি সবার ভালোবাসা জয় লাভ করেছে।

 

বিরিয়ানি বৈচিত্র্য 

বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে এর বিভিন্ন রূপ ও স্বাদ।একেক অঞ্চলে এটিকে একেক ভাবে রূপ দেওয়া হয়েছে। যেমন:

 

১. হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি:এটি কড়া মশলা ও জাফরান ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত।

 

২.লখনউ বিরিয়ানি:এটি হালকা মশলা ও মোলায়েম স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

 

৩.কলকাতার বিরিয়ানি:এটি আলু,নরম মাংস ও হালকা মশলার জন্য বিখ্যাত।

 

৪.বাংলাদেশের বিরিয়ানি: কাঁচা মাংস ও চাল একসাথে রান্না এবং বোরহানি, সালাদ দ্বারা পরিবেশন হয় বলে বিখ্যাত।

 

বিরিয়ানি কিভাবে রান্না করে

একেক জন বিরিয়ানিকে একেক ভাবে রান্না করে থাকে।

বিরিয়ানি কীভাবে রান্না করা হয় — এটি একটু সময়সাপেক্ষ ও যত্নের কাজ, কিন্তু ফলাফল হয় চমৎকার। নিচে ধাপে ধাপে বিরিয়ানি রান্নার প্রক্রিয়া (কাচ্চি স্টাইলের) দেওয়া হলো, যেটা বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়:

 

 

 

কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার ধাপ (গরু/খাসির মাংস দিয়ে)

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ (৬ জনের জন্য):

 

খাসির মাংস – ১ কেজি

 

বাসমতি বা কাচ্চি চাল – ১ কেজি

 

দই – ১ কাপ

 

পেঁয়াজ – ৫–৬টি (ভেজে বাদামি করে নিতে হবে)

 

আদা-রসুন বাটা – ৩ টেবিল চামচ

 

লেবুর রস – ২ টেবিল চামচ

 

জয়ফল, জয়ত্রি গুঁড়ো – সামান্য

 

দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ – পরিমাণমতো

 

ঘি – ১/২ কাপ

 

দুধে ভেজানো কেশর (ঐচ্ছিক)

 

লবণ – স্বাদ অনুযায়ী

 

তেল – প্রয়োজন মতো

 

কেওড়া জল / গোলাপ জল – ১ টেবিল চামচ

 

আলু (বড় করে কাটা) – ৪টি (সিদ্ধ করে অর্ধেক ভেজে রাখা)

 

 

 

 

ধাপে ধাপে রান্না প্রক্রিয়া:

 

ধাপ ১: মাংস মেরিনেট করা

 

মাংস ধুয়ে দই, আদা-রসুন বাটা, ভাজা পেঁয়াজের অর্ধেক, জয়ফল-জয়ত্রি গুঁড়ো, লেবুর রস, লবণ ও সামান্য তেল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ৪–৫ ঘণ্টা (রাতে রাখলে ভালো) মেরিনেট করে রাখুন।

 

 

ধাপ ২: চাল ধুয়ে আধা সিদ্ধ করে রাখা

 

চাল ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

 

পানি ফুটিয়ে তাতে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও লবণ দিয়ে চাল অর্ধেক সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে রাখুন।

 

 

ধাপ ৩: হাঁড়িতে স্তর তৈরি করা (Layering)

 

হাঁড়ির নিচে সামান্য তেল ও ঘি দিন।

 

তার উপর মেরিনেট করা মাংস বিছিয়ে দিন।

 

তার উপর হালকা করে সিদ্ধ চাল, ভাজা পেঁয়াজ, সিদ্ধ আলু, ঘি, কেশর-দুধ, ও কেওড়া জল দিন।

 

এভাবে ২–৩ স্তর করুন।

 

 

ধাপ ৪: দমে রান্না করা (Slow Cooking)

 

হাঁড়ির মুখ ময়দা দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিন যাতে বাষ্প বের না হয়।

 

খুব কম আঁচে ১.৫–২ ঘণ্টা রান্না করুন।

 

নিচ থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলে বুঝবেন বিরিয়ানি হয়ে গেছে।

 

 

 

 

পরিবেশন:

 

মশলাদার বিরিয়ানি পরিবেশন করুন বোরহানি, টক দই, সালাদ বা জর্দা’র সাথে।

 

 

 

টিপস:

 

মাংস ভালোভাবে মেরিনেট করলে নরম হয়।

 

চাল যেন বেশি সিদ্ধ না হয়—তাহলে ঝরঝরে থাকবে।

 

রান্নার সময় আঁচ কম রাখলে স্বাদ আরও গভীর হয়।

 

 

সমাজে বিরিয়ানির প্রভাব

বর্তমান সময়ে প্রায় সবার কাছেই বিরিয়ানি অধিক গ্ৰহনযোগ্য। এখন যেকোনো অনুষ্ঠানকে আর আকর্ষণীয় এবং সহজলভ্য করার জন্য বিরিয়ানিই সেরা।

 

 

পরিশেষে এটাই ধারণা করা যায় যে, বিরিয়ানি কেবল কোনো খাবার নয়,এটি যেন আবেগ ও ভালোবাসার প্রতীক।

One thought on “একরাশ ভালোবাসা মানেই বিরিয়ানি

Comments are closed.